আকাশ পরিষ্কার থাকলে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অপরূপ এক দৃশ্যের সাক্ষী হতে পারবেন মহাকাশপ্রেমীরা। আমাদের সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতি বছরের সবচেয়ে উজ্জ্বল দেখাবে শনিবার রাতে। এই গ্রহটি জুপিটার নামেও পরিচিত। পৃথিবী যখন সূর্য ও বৃহস্পতির মাঝামাঝি অবস্থানে পৌঁছায়, তখন এই গ্যাসীয় গ্রহটি সারা রাত উজ্জ্বলভাবে দৃশ্যমান থাকে। এ সময় জুপিটার এত উজ্জ্বল হবে যে, এটি রাতের আকাশে বেশির ভাগ তারা ও গ্রহকেও ম্লান করে দেবে।আগামী শনিবার ঠিক এমনটাই ঘটতে চলেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে, সন্ধ্যা নামার পর থেকে সারা রাত বৃহস্পতি উজ্জ্বলভাবে দৃশ্যমান হবে। খালি চোখে না দেখতে পারলেও সাধারণ দূরবীক্ষণ যন্ত্র বা টেলিস্কোপের সাহায্যে জুপিটারের চারটি প্রধান উপগ্রহ গ্যানিমিড, ক্যালিস্টো, আইও ও ইউরোপা দেখা যেতে পারে। এগুলোকে ‘গ্যালিলিয়ান চাঁদ’ বলা হয়। কারণ ১৬১০ সালে ইতালীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি এগুলো আবিষ্কার করেছিলেন।নাসার তথ্য অনুযায়ী, সন্ধ্যার পরপর এটি পূর্ব-উত্তরপূর্ব আকাশে বৃষ বা টরাস নামের তারামণ্ডলের মধ্যে অবস্থান করবে।
ডিসেম্বরের ১৪ তারিখের দিকে প্রায় পূর্ণ চাঁদ ও লালচে-কমলা রঙের অ্যালডেবারান নামের একটি তারকার পাশে বৃহস্পতি দেখা যাবে। এটি বৃষ তারামণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা এবং এটি খালি চোখে দেখা যায়।উত্তর গোলার্ধের বাসিন্দারা এ সময়ে ‘উইন্টার ট্রাইঅ্যাঙ্গেল বা শীতকালীন ত্রিভুজ’ নামের আকাশের একটি আকর্ষণীয় বিন্যাসও দেখতে পাবেন। এই ত্রিভুজ রাতের আকাশে তিনটি উজ্জ্বল তারা দিয়ে গঠিত। এই তারাগুলো হলো- ক্যানিস মেজর তারামণ্ডলের সিরিয়াস, ক্যানিস মাইনর তারামণ্ডলের প্রোসিওন ও ওরিয়ন তারামণ্ডলের বেটেলজিউজ। এই তারাগুলো সারা বছর দেখা যায়। প্রায়শই শীতকালীন আকাশে উজ্জ্বলভাবে দৃশ্যমান হয়।উইন্টার ট্রাইঅ্যাঙ্গেল খুঁজে বের করতে, প্রথমে ওরিয়নের বেল্ট নামে পরিচিত তিনটি তারকা খুঁজে বের করুন। এর নিচে ও বাম দিকে রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা সিরিয়াস দেখা যাবে। সেখান থেকে সামান্য উপরে বাম দিকে অবস্থিত প্রোসিওন। একইভাবে ওরিয়নের দিকে ফিরে তাকালে কাঁধের অংশে লালচে আভা বিক্ষেপকারী বেটেলজিউজ দেখতে পাবেন।এ সময় উল্কাপ্রেমীদের জন্য রয়েছে আরও একটি আকর্ষণ। উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে জেমিনিড মিটিওর শাওয়ার বা উল্কাবৃষ্টি ১৩ থেকে ১৪ ডিসেম্বর রাতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে। যদিও প্রায় পূর্ণ চাঁদের আলো অপেক্ষাকৃত কম উজ্জ্বল উল্কাগুলো আড়াল করে দিতে পারে বলে জানিয়েছে নাসা।এই উল্কাবৃষ্টি জেমিনি নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে আসছে বলে মনে হয়। তবে আসলে এই উল্কাগুলো ৩২০০-ফেটন নামের একটি গ্রহাণু থেকে উৎপত্তি হওয়া ধ্বংসাবশেষ। নাসার মতে, প্রতিবছরের মতো এবারও জেমিনিড বছরের অন্যতম নির্ভরযোগ্য উল্কাবৃষ্টি হিসেবে বিবেচিত হবে। সূত্র: এনবিসি নিউজ