পেটকে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার মতো সাগর বানানোর প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে বালাদেশের জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যারা এক সময় সংখ্যালঘুদের জমি ছিনিয়ে নিয়েছে, তারাই এখন মায়া কান্না কাঁদে।তিনি আরও বলেন,আওয়ামী লীগের আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে জামায়াত। জামায়াতের ১১ শীর্ষ নেতাকে খুন করা হয়েছে, এটা জুডিশিয়াল কিলিং। অসংখ্য সাথী নিহত ও পঙ্গু হয়েছেন। হাজার হাজার মামলা হয়েছে, লাখও মানুষ জেলে গিয়েছেন।সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে রংপুর সদর উপজেলার পাগলাপীর বাজারে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, সাড়ে পনেরো বছর শাসন নয়, আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে শ্মশানে পরিণত করেছিল। শেখ হাসিনা স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে বাংলাদেশকে অন্য দেশের কাছে ইজারা দিয়েছিলেন। এমন কাজ করা উচিত নয়, ক্ষমতা চলে গেলে পালিয়ে যেতে হয়, আত্মগোপনে যেতে হয় কিংবা ভয়ঙ্কর পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়।জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশকে শোষণ করেছে আওয়ামী লীগ, বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। সেনাবাহিনীর ৫৭ জন অফিসারকে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণের হক নষ্ট করেছে, তাই এই দলকে ক্ষমা করার অধিকার কারও নেই।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সেনাবাহিনীকে শেষ করে দিল, বিডিআর ধ্বংস করে দিল, মালিক বাড়ি ছেড়ে পালায় না, পালিয়ে গিয়ে দেশের মানুষকে শান্তি দিচ্ছে না, এ দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ, বিচারিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করেছে। জামায়াত ক্ষমতায় আসলে চাঁদাবাজি করবে না।তিনি আরও বলেন, মঈনুদ্দিন ও ফখরুদ্দিন সরকার জামায়াতে ইসলামীর ক্ষতি করেছে। মঈন-ফখর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হঠাৎ এক বুদ্ধিজীবী হুংকার দিয়ে উঠলেন যে- জামায়াতের নেতাকর্মীরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩০ হাজার একর জমি অবৈধভাবে দখল করেছেন। এরকম কিছু খুঁজে পাননি তারা। এরকম আমাদের বিরুদ্ধে মাঝে-মধ্যেই অভিযোগ করা হতো।জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, খালেদা জিয়া ৩ কোটি টাকা এক একাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে সেভ করে রেখেছিল। কিন্তু টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাকে অসহনীয় নির্যাতন ও কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। ফ্যাস্টিস আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে দেশের ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। জনগণ কোনওদিন শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করবে না।দুই হাজারের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সবগুলো নির্যাতন কিন্তু ধর্মীয় কারণে হয়নি। আমি রাজনীতি করি, এটা অপরাধ না। যে ধর্মের মানুষ হই না কেন এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমার রাজনীতি করার অধিকার আছে। ছোট্ট একটা দেশ, এত ভাগ কিসের আবার। জাতীয় স্বার্থে আমরা সবাই এক। কারণ দেশ বাঁচলে আমিও বাঁচব, সবাই বাঁচবে। অশান্তি হলে সবাইকে তা ভোগ করতে হবে।বিগত সরকারের আমলে জামায়াত ইসলামী সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, বিগত ১৩ বছর সারা দেশে আমাদের অফিস সিলগালা ছিল। আমাদের দলকে নির্বাচন কমিশন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে এবং প্রতীক ও নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই চাপ আর কোনও দল পায়নি। ৫ আগস্টের আগে দেশে দখলদারি-চাঁদাবাজি হয়েছে। এখনও হচ্ছে। শুধু ফ্ল্যাগ বদল হয়েছে; ডান হাত থেকে বাম হাতে গেছে।তিনি আরও বলেন, আমাদের রাজনীতি জনকল্যাণমুখী, জনদুর্ভোগ নয়। জামায়াতের ওপর মানুষ আস্থা রাখালে দুর্নীতিমুক্ত দেশ উপহার দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। এসময় রংপুরের মজলুম জননেতা এটিএম আজাহারুল ইসলামের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান তিনি। তিনি জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের জন্য রংপুরবাসীকে ধন্যবাদ জানান এবং আবু সাঈদসহ সকল শহীদদের তাদের আত্নত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।পথসভায় রংপুর সদর উপজেলার আমির মো. মাজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবুল হাসনাত মো. আব্দুল হালিম এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল। এ সময় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।