নানা মত-ধর্ম-রীতিনীতির মধ্যেও আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য। এ দেশের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠী—সব মিলিয়ে এ দেশের মানুষের বিচিত্র ভাষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য। আগামীকাল পহেলা বৈশাখ, আমাদের এই সম্প্রীতির অন্যতম প্রতীক বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর মেরুলে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে ‘সম্প্রীতি ভবন’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি বরাবরই বলে এসেছি, নানা মত-ধর্ম-রীতিনীতির মধ্যে আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য। এদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী মিলে গড়ে তুলেছে এক বৈচিত্র্যময় সমাজ। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যও বহুমাত্রিক।
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল পহেলা বৈশাখ, এটি আমাদের জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন, একটি সর্বজনীন উৎসব। প্রত্যেকে নিজ নিজ উপায়ে, নিজেদের রীতি অনুযায়ী এই দিনটি উদযাপন করুন—এমনটাই আমার প্রত্যাশা।
অনুষ্ঠানে ‘সম্প্রীতি ভবন’ নির্মাণে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন ও আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই বিহার আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি জাতীয় স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।’
গৌতম বুদ্ধের অহিংসা ও সাম্যের বাণীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বৌদ্ধ বিহারগুলো শুধু ধর্মীয় চর্চার কেন্দ্র নয়, বরং জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিরও অংশ। অতীতে এসব বিহার ছিল জ্ঞান ও শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। বিদেশি শিক্ষার্থী ও ভিক্ষুরা এখানে এসে জ্ঞান অর্জন করতেন এবং বিশ্বে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিতেন।’
তিনি অতীশ দীপঙ্করের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘অতীশ দীপঙ্কর আমাদের ইতিহাসের গর্ব। তিনি মহামানব বুদ্ধের বাণী বহন করে নিয়ে গেছেন তিব্বতে, যেখানে আজও তাকে সর্বোচ্চ সম্মানে স্মরণ করা হয়।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘সম্প্রীতি ভবন দেশের ও বিশ্বের শান্তি, সহাবস্থান ও মানবতার বার্তা ছড়িয়ে দেবে। আমাদের এই অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যকে ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। শুভ নববর্ষ।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় জনগণ উপস্থিত ছিলেন।