রবিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
No menu items!
বাড়িলিড নিউজগাজায় বেছে বেছে নারী-শিশুদের হত্যা করছে ইসরায়েল- জাতিসংঘ

গাজায় বেছে বেছে নারী-শিশুদের হত্যা করছে ইসরায়েল- জাতিসংঘ

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু বলে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।যুদ্ধবিরতি ভেঙে পুনরায় গাজায় মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে গাজায় অন্তত ৩৬টি ইসরায়েলি বিমান হামলায় শুধুই ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু নিহত হয়। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে ফিলিস্তিনিদের ‘একটি গোষ্ঠী হিসেবে টিকে থাকার ক্ষমতা’ হুমকির মুখে পড়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র রবিনা শামদাসানি শুক্রবার জানান, ১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় বসতবাড়ি ও শরণার্থী শিবিরের ওপর ২২৪টি ইসরায়েলি হামলার তথ্য নথিভুক্ত করেছে তাদের দপ্তর।
তিনি বলেন, এই হামলাগুলোর মধ্যে ৩৬টি হামলার তথ্য আমরা যাচাই করেছি। যেখানে নিহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কেবল নারী ও শিশুরাই ছিল।
এই তথ্য এমন সময়ে সামনে এলো, যখন মার্চে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ১৫শ’র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
একইসাথে গাজা উপত্যকায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে ইসরায়েল। যার ফলে খাদ্য, পানি, ওষুধসহ জরুরি পণ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে।
উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তারা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে শিশুদের কান্না ও সাহায্যের আকুতি শুনতে পাচ্ছেন
—আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, গত এক মাসে গাজায় একফোঁটা ত্রাণও প্রবেশ করেনি। নেই খাবার, নেই জ্বালানি, নেই ওষুধ— এমনকি বাণিজ্যিক পণ্যও না। ত্রাণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যেন মৃত্যুর দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেছে। গাজা এখন একটি হত্যাক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে— সাধারণ মানুষ এক অবিরাম মৃত্যুচক্রে বন্দি।
শুক্রবার ভোর থেকে গাজায় আরও অন্তত ১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি বাড়িতে বোমা হামলায় একই পরিবারের ১০ সদস্য প্রাণ হারান, যার মধ্যে ৭ জনই শিশু।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার ফলে বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন। মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহর থেকে প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম জানিয়েছেন, উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন— ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে শিশুদের কান্না ও সাহায্যের আকুতি তারা শুনতে পেয়েছেন।
যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি গাজায়পরবর্তীতে আল জাজিরার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র শামদাসানি বলেন, গাজার পরিস্থিতি এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভয়াবহ।
তিনি জানান, ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক ক্রমশ ছোট ছোট এলাকায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। একদিকে হামলা চলছে, অন্যদিকে মানবিক সহায়তা বন্ধ। ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার শর্ত হিসেবে বন্দিমুক্তির দাবি করছে ইসরায়েল।

১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত গাজায় ২২৪টি ইসরায়েলি হামলার তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬টি হামলার তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে যে নিহতরা শুধু নারী ও শিশু

তিনি বলেন, আমরা আজ আবারও বলছি— ইসরায়েলি বাহিনীর ধারাবাহিক আচরণ বিবেচনায়, গাজায় ফিলিস্তিনিদের এমন জীবনযাত্রার পরিস্থিতিতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, যা তাদের একটি জাতি হিসেবে টিকে থাকার সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
ইসরায়েল সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। সম্প্রতি দক্ষিণ গাজার আরও এলাকা দখলের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। একইসঙ্গে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একাধিক বার পুনঃবসতির নির্দেশ দিয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে গাজাজুড়ে প্রায় ৪ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এক্সে প্রকাশিত এক পোস্টে সংস্থাটি লিখেছে, তারা বর্তমানে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের ত্রাণ ও বাণিজ্যিক সরবরাহ বন্ধের শিকার। জরুরি মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই বাধাহীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মানবতার সেবায় কালিয়াকৈর গ্রুপ

টিভিতে আজকের খেলা

রেমিট্যান্সে জোয়ার, ২১ দিনে এলো ২ বিলিয়ন ডলার