মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সকাল ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায়ও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আগুনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে।
ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের পাশাপাশি কাজ করছে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সাহায্যকারী দল। যোগ দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একটি টিম। পুলিশ আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল ও উৎসুক জনতার ভিড় নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মার্কেটের চার দিক থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। তবে বাতাসের কারণে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ছে। এই আগুন আশেপাশের আরও চারটি মার্কেটে ছড়িয়ে পড়েছে। বঙ্গবাজার মার্কেট, ইসলামিয়া মার্কেট, বঙ্গ ১০ কোটি মার্কেট, আদর্শ মার্কেট- এই চারটি মার্কেট এক জায়গায় হওয়ায় মূলত সবগুলোকেই লোকজন বঙ্গবাজার মার্কেট হিসেবে ডেকে থাকেন। এই চারটি মার্কেটে প্রায় তিন হাজার দোকান রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। নানা রকম কাপড় থাকায় আগুনের তীব্রতা বাড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবাজার মার্কেট ছাড়াও রাস্তার উল্টো পাশে একটি মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। বঙ্গবাজারে আগুনের তীব্রতার কারণে সড়কে রাখা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো দূরে সরিয়ে ফেলতে হয়েছে। দূরে থাকা গাড়িগুলো থেকে পাইপ সংযোগ দিয়ে পানি নিক্ষেপ করতে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। আগুনের কারণে ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে ছেয়ে গেছে বঙ্গবাজারের আকাশ। ভয়াবহ এ আগুনের কারণে প্রচণ্ড তাপ অনুভূত হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানিয়েছে, বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় ফায়ার সার্ভিসের যত ইউনিট আছে সব ইউনিট ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক বলেন, “প্রয়োজন হলে সব ইউনিট কাজ করবে, না হলে চলে আসবে।”
ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বলছে, আশপাশের বৈদ্যুতিক লাইনগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। আগুন যেন ছড়াতে না পারে সেজন্য ফায়ার সার্ভিসের লেডার গাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে। এটি দিয়ে উপর থেকে পানি নিক্ষেপ করা সম্ভব হবে। এই লেডার দিয়ে পানি নিক্ষেপ করা হচ্ছে। আর ধোয়ার কারণে কিছুটা কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। আর ৬টা ১২ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এছাড়া হতাহতের কোনো খবরও পাওয়া যায়নি। তবে ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মী আহত হয়েছেন।
মার্কেটের দোকানিরা জানান, প্রথমে আগুন লাগে গুলিস্তান মার্কেটে। সেখানে থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বঙ্গবাজার মার্কেটে। এখন পাশের অন্য ভবনেও ছড়িয়ে পড়েছে। কাপড়ের মার্কেট হওয়ায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঈদ উপলক্ষে শাড়ি, জিন্সের প্যান্টসহ বিপুল কাপড়ের স্টক ছিল তাদের দোকানে। সব দোকানে কাপড় থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
অ্যানেক্স মার্কেটের দোকান মালিক নাসিম বলেন, “বঙ্গবাজার, মহানগর, আদর্শ ও গুলিস্তান মার্কেট আগুনে পুড়ে গেছে। এখন অ্যানেক্স মার্কেটে আগুন লেগেছে।”
অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী ইসলামিয়া মার্কেটসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলের বিপরীতে থাকা দোকানের মালিক ও কর্মচারীদের তাদের দোকানে থাকা মালামাল বের করে রাখতে দেখা গেছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আশপাশের সব রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্ট চত্বর থেকে বঙ্গবাজার হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত সড়কটি বন্ধ রাখা হয়েছে। অপরদিকে গুলিস্তান থেকে নর্থসাউথ রোডে আসার সড়কটিতেও যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, “আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নিরাপত্তায় শাহবাগ থানা পুলিশ ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”
এছাড়া উৎসুক জনতার ভিড়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসকে। বঙ্গবাজার এবং আশপাশে হাজারো উৎসুক জনতার ভিড় ঠেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে জরুরি বিভাগ।
এ পরিস্থিতিতে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে দূরে অবস্থান করতে স্থানীয় মসজিদের মাইক ছাড়াও বিভিন্ন হ্যান্ড মাইকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কিন্তু বারবার মাইকে বলার পরও কারও মধ্যে কোনো ভ্রুক্ষেপ দেখা যায়নি। মত সড়কে অবস্থান করে নিজেদের মোবাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত উৎসুক মানুষ।