গাজীপুর সিটি ভোটের বেসরকারি ফলে নির্বাচিত হলেও এখনই মেয়রের চেয়ারে বসছেন না জায়েদা খাতুন। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিতে তাকে অপেক্ষা করতে হবে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের প্রথম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। ফলে সেই পর্যন্ত আছে বর্তমান নেতৃত্বের মেয়াদ। তাদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত আরও অন্তত ৩ মাস অপেক্ষা করতে হবে জায়েদা খাতুনকে। দায়িত্ব নেয়ার পর গাজীপুরের প্রথম আর দেশের দ্বিতীয় নারী সিটি মেয়র হবেন জায়েদা খাতুন।
বিএনপির বর্জনের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় রাজধানী লাগোয়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনে। এতে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে। তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে পরাজিত করেন।
৪৮০ কেন্দ্রের বেসরকারি ফলে ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। আর আজমত উল্লা নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
জায়েদা খাতুন গাজীপুরের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের মা। জাহাঙ্গীর এ নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেও ঋণ খেলাপের অভিযোগে তা পরে বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন।
আদালতের দারস্থ হয়েও প্রার্থীতা ফেরত পাননি জাহাঙ্গীর। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থীতা করায় এরই মধ্যে জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর নির্বাচনে না থাকলেও ছায়া হয়ে ছিলেন জায়েদা খাতুনের সাথে। ফলে গাজীপুরে জাহাঙ্গীরের অনুসারীদের পুরো সমর্থনও পেয়েছেন জায়েদা। নির্বাচনে এই ফ্যাক্টরটি জায়েদাকে এগিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের একটি বড় অংশের ভোট তিনি পেয়েছেন।
জায়েদার বিজয়ে শুক্রবার সকাল থেকেই সমর্থকরা জড়ো হন তার বাসার সামনে। কেউ এসেছেন ফুল নিয়ে, কেউ বা শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে। আনন্দ, উল্লাস আর স্লোগানে মেতে ওঠেন তারা।
জায়েদার নেতৃত্বে গাজীপুর একটি মডেল নগরী হবে এমন প্রত্যাশা তাদের। নবনির্বাচিত এ মেয়র জানান, দায়িত্ব নেয়ার পর তার প্রধান লক্ষ্য হবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সড়ক উন্নয়নসহ নগরবাসীর সমস্যা সমাধান। তিনি বলেন, ‘জনগণ ও নগরের উন্নয়নের সহযাত্রী হয়ে কাজ করবো।’
সেই সাথে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করায় সরকারকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
এদিকে ভোটের ফল মেনে নিয়ে জায়েদাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। পরাজয়ের কারণ খুঁজে বের করা হবে।’
গাজীপুরে আগের দুটি নির্বাচনের প্রথমটিতে বিএনপি ও দ্বিতীয়টিতে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ২০১৩ সালে প্রথম ভোট হয় গাজীপুর সিটিতে। সেবার ভোট হয়েছিলো নির্দলীয় প্রতীকে।
সেই নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন করেছিলো আজমত উল্লা খানকে। তিনি ১ লাখ ৩২ হাজার ভোটে পরাজিত হন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নানের কাছে।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় গাজীপুরে। এতে দুই লাখ দুই হাজারের বেশি ভোটে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে হারিয়ে জয় পান নৌকার জাহাঙ্গীর আলম।