রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
No menu items!
বাড়িক্যারিয়ারমুখোমুখি দুই দল, জনমনে শঙ্কা

মুখোমুখি দুই দল, জনমনে শঙ্কা

দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একই সময়ে (বুধবার,১২জুলাই) পাশাপাশি স্থানে সমাবেশ আহ্বানকে ঘিরে রাজধানীবাসির মাঝে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র পল্টনে বিএনপি এবং বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট এলাকায় সমাবেশ ডেকেছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝেও চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। দীর্ঘদিনের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ হঠাৎ যেন ফুঁসে উঠছে। চলমান এই রাজনৈতিক ইস্যু ভাবিয়ে তুলেছে রাজনীতি সচেতন মানুষকেও। দুটি সমাবেশ ঘিরে সংঘাতের আশঙ্কা করছে কেউ কেউ। মঙ্গলবার (১১জুলাই) রাজধানীর মগবাজারে অজ্ঞাত দুস্কৃতিকারীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। দুর্ভাবনা বেড়ে গেছে আরও।

এদিকে, রাজধানীতে তারুণ্যের সমাবেশ থেকে সরকার পতনের ‘এক দফা’ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যন্ত্রণাকাতর বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোও একই দিন ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সমাবেশ করে ‘এক দফা’ আন্দোলনের ঘোষণা দেবে। বিগত দিনগুলোতে বিএনপির আন্দোলনকে তেমন পাত্তা দেয়নি আওয়ামী লীগ। তবে দ্বাদশ নির্বাচনের আগমুহূর্তে সরকার পতনের নামে ‘এক দফা’ আন্দোলন বেশ ভাবিয়ে তুলেছে ক্ষমতায় থাকা উচ্ছ্বসিত দলটিকে।

বুধবার (১২ জুলাই) বিএনপি কর্মসূচির বিষয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নগরবাসীর জানমাল রক্ষা ও নিরাপদে রাখতে বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এই সমাবেশে প্রায় দেড় লাখ নেতাকর্মীদের উপস্থিতির মধ্যদিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দিবে তারা।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, বুধবারের শান্তি সমাবেশ অতিথের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে জনসমুদ্রে রূপ নেবে। এদিন দেড় লক্ষাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে গুলিস্তান-নবাবপুর, দৈনিক বাংলা মোড়, মুক্তাঙ্গন-জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় শুধু আওয়ামী লীগের দখলে থাকবে। একইসঙ্গে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি প্রমাণ করে দেবে দেশবাসী আগামী নির্বাচনে আবারও ভোট দিয়ে শেখ হাসিনার সরকারকে জয়যুক্ত করবে।”

ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল বলেন, “বুধবার বায়তুল মাকাররমের দক্ষিণ গেটের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি থানা-ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্ব-স্ব ইচ্ছায় দলে দলে এই সমাবেশে যোগদান করবে। আমি ডেমরার পক্ষে ৩-৪ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগদান করব।”

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বিএনপি শেষ মুহূর্তে একটা কিছু করার চেষ্টা চালাবে। তবে সরকার পতনের নামে কথিত এক দফার আন্দোলনে হরতাল, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা ও ভাঙচুরের চেষ্টা হলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, “বিএনপি রাজপথে থাকলে আওয়ামী লীগও থাকবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তাছাড়া এক বছর আগেই আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থেকে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছি আমরা। আন্দোলনের নামে হরতাল, ধর্মঘট ও ভাঙচুর করলে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।”

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “আওয়ামী লীগ রাজপথ ছাড়বে না। আগামী সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সব অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজপথে থাকবে। বিএনপি জনগণ ও বিদেশিদের প্রভাবিত করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।”

একই বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, “গত বছরের ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে ‘খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে-সরকারের পতন ঘটাবে’ এমন ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তাদের কৌশল কাজে আসেনি। শেষ পর্যন্ত গোলাপবাগ গরুর হাটে জনসভা করে ফিরে যেতে হয়েছিল। বুধবারও বিএনপির ‘এক দফা’ আন্দোলনে খালি হাতে ফিরে যেতে হবে। কারণ দেশের জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা দেশের শান্তি, স্থিতিশীল পরিবেশ, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে থাকব। কেউ অশান্তি-সন্ত্রাস নৈরাজ্য করলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।”

এদিকে, বিএনপির কয়েক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘এক দফা’ আন্দোলন সফল করতে ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সমাবেশের মৌখিক অনুমতি প্রসঙ্গে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বুধবার ডিএমপির কমিশনারের কাছে কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে সমাবেশ করার জন্য তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। তারা আমাদের মৌখিকভাবে সম্মতি দিয়েছে, আশা করছি আজকে  লিখিতভাবে অনুমতি দেবে। সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। ফলে অনুমতি দিলেও সমাবেশ হবে, না দিলেও সমাবেশ হবে।”

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “পূর্বের বিভাগীয় সমাবেশ থেকে শুরু করে তারুণ্যের সমাবেশ যেমন শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে, তেমনি বুধবার ঢাকার সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সফল করব। বুধবারের সমাবেশ আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিশৃঙ্খলা করার জন্য আবার পালটা সমাবেশের তারিখ ঘোষণা করেছে। সরকার চাইছে আমরা যেন সংঘর্ষে জড়াই। কিন্তু আমরা সরকারের ফাঁদে পা দেবো না। এবারের সমাবেশ হবে ঐতিহাসিক সমাবেশ। যেখান থেকে সরকারের পতনের ‘এক দফা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”

এমরান সালেহ প্রিন্স আরও বলেন, “ঢাকার বাইরে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হয়েছে, এখানেও তাই হবে। তবে সরকারই বিএনপির সমাবেশ ঘিরে যে ধরনের আচরণ করছে, সেটাই সাধারণ মানুষকে বেশি আকৃষ্ট করছে এবং বেশি আলোচনা হচ্ছে।”

একই দিনে পাশাপাশি জায়গায় আওয়ামী লীগের সমাবেশ নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আওয়ামী লীগ ৭১’ এ শান্তি কমিটি করেছে, ৭৩’ এ শান্তি বাহিনী গঠন করেছে। আর এখন শান্তি সমাবেশ করছে। তারা যদি শান্তি সমাবেশের নামে কোনো অশান্তি করে, তাহলে তার দায়ভার তাদের নিতে হবে। আমাদের সমাবেশ পূর্বনির্ধারিত। ফলে চলমান কর্মসূচি যেমন শান্তিপূর্ণ হয়েছে তেমনি বুধবারের সমাবেশও হবে শান্তিপূর্ণ।”

তথ্য সূত্র:  সংবাদ প্রকাশ

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মানবতার সেবায় কালিয়াকৈর গ্রুপ

টিভিতে আজকের খেলা