ইউক্রেন যুদ্ধের অব্যবহিত প্রভাব হিসেবে গোটা বিশ্বেই জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। নয় মাসের বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধ বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে কম-বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থায় সবার মাথাতেই এক প্রশ্ন, কবে জ্বালানি তেলের দাম আগের পর্যায়ে পৌঁছাবে? কারণ, এর সাথেই যুক্ত নিত্যপণ্যের দামসহ সামগ্রিক অর্থনীতির বিষয়াদি।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার সামরিক অভিযান দিয়ে যে যুদ্ধের সূচনা হয়েছে, তা এখনো চলমান। এর সাথে পরোক্ষভাবে পুরো পশ্চিমা শক্তি জড়িয়ে পড়েছে। ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো এই জড়িয়ে পড়া এবং রাশিয়ার নিজ অবস্থানে অটল থাকার জেরে এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা প্রবল। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দামে।
গোটা ইউরোপ গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। অঞ্চলটির মোট জ্বালানি চাহিদার ২৫ শতাংশের মতো আসে রাশিয়া থেকে। গ্যাসের প্রসঙ্গ এলে এর হার ৪০ শতাংশের কাছাকাছি। জার্মানিসহ পশ্চিম ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ গ্যাস সরবরাহের জন্য নর্ড স্ট্রিম ১ ও ২-এর ওপর নির্ভরশীল। এই দুটি পাইপলাইনই এখন বন্ধ আছে। এ কারণে চলতি শীতের আগে থেকেই গেম অব থ্রোনসের মতো করে বারবার পশ্চিমা মিডিয়ায় বলা হচ্ছিল-উইন্টার ইজ কামিং।
জ্বালানি আক্ষরিক অর্থেই একটি দেশের অর্থনীতির জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। এর সাথে জড়িয়ে থাকে অর্থনীতির ব্যাষ্টিক ও সামষ্টিক সবগুলো খাত। ফলে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ওপর। হচ্ছেও তাই। বেশি দূর নয় বাংলাদেশের দিকে তাকালেই বিষয়টি বোঝা যাবে। নিত্যপণ্যের দাম ক্রমেই বাড়ছে। সাধারণ স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় একটি প্রশ্নই বারবার করে সামনে আসছে- জ্বালানির দাম কবে পূর্বাবস্থায় ফিরবে? এই পূর্বাবস্থা বলতে ইউক্রেন যুদ্ধের আগের পর্যায়ের কথা বলা হচ্ছে।
ইউরোপের দেশগুলো এরই মধ্যে জ্বালানি কম ব্যবহারের কৌশল নিয়েছে। ব্রিটেন যেমন দীর্ঘমেয়াদি মন্দার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ আর কিছুই নয় জ্বালানির অতি উচ্চমূল্য। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিজ নাগরিকদের সতর্ক করে গত আগস্ট মাসেই বলেছেন, প্রাচুর্যের যুগ শেষ। জার্মানি সব নাগরিক এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের একটি সীমা পর্যন্ত জ্বালানির দাম পরিশোধে ভর্তুকি ঘোষণা করেছে।
সবাই ধরেই নিয়েছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হতে যাচ্ছে। খেরসন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের পর যে আশা দেখা দিয়েছিল, তা মিইয়ে গেছে অনেকটাই। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার শান্তি আলোচনার জন্য ইউক্রেনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর শঙ্কা, রাশিয়া নত হবে না। সে ক্ষেত্রে এ যুদ্ধ আরও বাজে, মানে বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে। দতাই ইউক্রেনকেই এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি, যা এরই মধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে জ্বালানি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট সহজে মেটার নয়। কিছুদিনের মধ্যে সুসংবাদ পেলেও জ্বালানি পরিস্থিতি ইউক্রেন যুদ্ধ-পূর্ববর্তী পর্যায়ে যেতে দুই বছর সময় লাগতে পারে বলেও তারা মনে করছেন।