রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
No menu items!
বাড়িলিড নিউজসীমান্তে মাদক-গুলির শব্দ,আতঙ্কে দিনাজপুরবাসী

সীমান্তে মাদক-গুলির শব্দ,আতঙ্কে দিনাজপুরবাসী

দিনাজপুরের প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার এলাকাঘেঁষা ভারতীয় সীমান্ত।সীমান্তের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মাদক ও থেকে থেকে গুলির শব্দ। ফলে আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করতে হচ্ছে সীমান্তবর্তী মানুষকে। পাশাপাশি মাদকের ছোবলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশের অংশে ঢুকে পড়েন। কারণ ভারতীয় অংশে কাঁটাতারের বাইরেও ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ আন্তর্জাতিক রেখা অনুযায়ী ১৫০ ফুট এলাকা রয়েছে। সেই অংশে মাঝেমধ্যেই অনেক বাংলাদেশি এবং গ্রামের গরু, ছাগল ঢুকে পড়ে। বাংলাদেশের অংশে কাঁটাতারের বেড়া না থাকার কারণে অনেকটা অনিরাপদ বলে মনে করছেন সীমান্তের বাসিন্দারা।কামদেবপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোরসালিন ইসলাম বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই ভারতীয় সীমান্তে গুলির শব্দ পাওয়া যায়। এতে করে আমরা অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। ২০২৪ সালের এপ্রিলের দিকে বিএসএফের গুলিতে নিহত অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া গিয়েছিল এখানে।একই এলাকার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘সীমান্তে গুলির শব্দে অনেক সময় রাতে ঘুম ভেঙে যায়। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুরা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান।দিনাজপুরের বিরলের ধর্মপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্ত আর পুনর্ভবা নদীঘেঁষা কামদেবপুর এলাকার দুই কিলোমিটারজুড়েই মাদকের ভয়াল থাবা পড়েছে। এই গ্রামে গত দুই বছরে মাদকাসক্ত হয়ে বেশ কয়েকজন অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী। আবার কেউ কেউ বাপ-দাদার জমিজমা বিক্রি করে এখন সর্বস্বান্ত। মাদক সেবনের আগে যিনি ১০-১৫ বিঘা জমির মালিক ছিলেন, আজকে তারা অনেকেই একেবারে পথের ফকির। মাদকের ছোবলে পড়ে নিজের ভিটাবাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন কেউ কেউ।কামদেবপুর গ্রামে চিহ্নিত চার থেকে পাঁচজন মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। যারা একসময়ে দিনমজুরের কাজ করতেন। আজকে তারা শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে গ্রামবাসী জানান। এই মাদক ব্যবসায়ীদের নাম প্রশাসনসহ অনেকেই জানেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তবে নিরাপত্তাহীনতার কারণে সংবাদকর্মীদের কাছে এসব মাদক ব্যবসায়ীর নাম প্রকাশ করতে চাননি গ্রামবাসী।দিনাজপুর শহর থেকে কামদেবপুর গ্রামে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উঠতি বয়সী যুবকদের আনাগোনা দেখা যায়। জানা যায়, কামদেবপুর গ্রামের পাশেই গৌরীপুরের পুনর্ভবা নদীর ওপর স্লুইসগেটটিকে অনেকেই মাদক সেবনের নিরাপদ আশ্রয় মনে করছে। প্রতিদিন দিনাজপুর শহর থেকে মোটরসাইকেলযোগে বেশ কিছু উঠতি বয়সী যুবককে কানদেবপুর গ্রামে যেতে দেখা যায়।কামদেবপুর গ্রামের স্কুলছাত্র থেকে শুরু করে শিক্ষক পর্যন্ত অনেকেই মাদক সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি কামদেবপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সেলিমের অফিসে বসেই ফেনসিডিল সেবনের দৃশ্য গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়ে, যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় প্রশাসন কামদেবপুর উচ্চবিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সেলিমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
কামদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা মানিক হোসেন বলেন, ‘রাত হলেই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে ফেনসিডিল নিয়ে আসছে। ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক আমাদের এই এলাকার যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।একই গ্রামের যুবক হাসনাত মুহিত বলেন, ‘মাদক শুধু একটি পরিবার নয়, একটি গ্রামকে নয়, পুরো একটি ইউনিয়নকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি তার বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান কাউকে মানছে না। দিনশেষে মাদকের টাকা জোগাড়ে সে বাবা-মায়ের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করছে।বিজিবির দিনাজপুর ২২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আহসান উল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে বিজিবি আরও কঠোরভাবে সীমান্ত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। ৫ আগস্টের পরবর্তী সময় দিনাজপুরের কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকরা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। মাদকের ক্ষেত্রে বিজিবি জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। তবে মাঝেমধ্যে বিএসএফ অস্ত্র ব্যবহার করে। বিশেষ করে তারা নন-নিথার (অস্ত্র) ব্যবহার করেন, তবে সেটি প্রাণঘাতী নয়। এই শব্দে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মানবতার সেবায় কালিয়াকৈর গ্রুপ

টিভিতে আজকের খেলা