শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
No menu items!
বাড়িজাতীয়চাঁদপুর পাক হানাদার মুক্ত দিবস আজ

চাঁদপুর পাক হানাদার মুক্ত দিবস আজ

আজ ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে চাঁদপুর পাক হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে মুক্ত হয়েছিল। এদিন চাঁদপুর সদর মডেল থানার সামনে বিএলএফ বাহিনীর প্রধান মরহুম রবিউল আউয়াল কিরণ প্রথম চাঁদপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তির সংগ্রামে জেলার মুক্তিকামী জনতা এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল চাঁদপুরে পাক হানাদার বাহিনী দুইটি বিমান থেকে সেলিংয়ের মাধ্যমে প্রথম আক্রমণের সূচনা করেছিল। প্রথম দিনেই হামলায় শহরের বাণিজ্যিক এলাকা পুরান বাজারের এক নারী পথচারী নিহত হয়েছিলেন। পরদিন বিকেলে প্রায় পাঁচ শতাধিক পাকসেনার একটি বহর চাঁদপুর আসে।শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর সরকারি কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়টি অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে পাকিস্তানি সেনারা। আর পাকিস্তানি সেনা অফিসারদের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউসটি নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওই স্কুলের মাঠ থেকে প্রতিদিনের মতো লতুফা বেগম নামে এক বৃদ্ধা গরু-ছাগল নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। এ সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা রাতের আহার জোগাড় করার জন্য প্রথম অপারেশন হিসেবে ওই বৃদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করে এবং বৃদ্ধার একটি গরু ও একটি ছাগল নিয়ে যায়।এপ্রিল থেকে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের চলে দফায় দফায় গোলাগুলি। পরে গঠন করা হয় শান্তিবাহিনী। তারপর নতুন কায়দায় শান্তি বাহিনী ও পাকিস্তানি বাহিনী বিভিন্ন স্থানে চালাতে থাকে বর্বর অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ। ৩৬ ঘণ্টা টানা যুদ্ধের পর পালিয়ে যায় তারা।এভাবে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের দোসররা কত লোককে হত্যা করেছে তার কোনো হিসেবে নেই। চাঁদপুর জেলায় (তৎকালীন মহকুমা) সর্বশেষ যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর লাকসাম ও মুদাফ্ফরগঞ্জ মুক্ত হওয়ার পর। যৌথ বাহিনী হাজীগঞ্জ দিয়ে ৬ ডিসেম্বর চাঁদপুর আসতে থাকলে মুক্তিসেনারা হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়।ভারতীয় গার্ডস রেজিমেন্টের নেতৃত্বে ৩১১তম মাউন্টেন ব্রিগেড ও ইস্টার্ন সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ আক্রমণ চালায়। দিশা না পেয়ে পাকিস্তান ৩৯ অস্থায়ী ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল রহিম খানের নেতৃত্বে দুটি জাহাজে করে নৌ-পথে ঢাকার উদ্দেশ্যে চাঁদপুর থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় মুক্তি বাহিনী, মিত্র বাহিনীর ট্যাংক ও বিমান আক্রমণে চির কবর রচনা হয় নদীতে।চাঁদপুর মুক্ত দিবসের আগের ঘটনার বর্ণনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ মাস্টার। তিনি সদর উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন।তিনি বলেন, ‘৮ ডিসেম্বর সকালে আমাদের সহযোদ্ধা শহীদুল্লাহ ভুঁইয়া, হোসেন ব্যাপারী বহরিয়া বাজারে ছিলাম। ঠিক, ওই সময় পাক সেনাদের একটি জাহাজ মেঘনা নদী দিয়ে চাঁদপুরের দিকে যাচ্ছিল। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জানান দিতে আমার হাতে থাকা গ্রেনেড ছুড়ি। তখন আওয়াজ হলে পাকবাহিনী পাল্টা গুলি ছুড়ে। তখন ওয়াপদা সংলগ্ন স্থানে একটি গবাদি পশু এবং একটি কিশোর ছেলের মৃত্যু হয়। এরপর পাকবাহিনী তিন নদীর মোহনায় আসার পরে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এভাবেই ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলমুক্ত হয়।তিনি আরও বলেন, ‘৮ এপ্রিল রাতেই চাঁদপুরে অবস্থানরত ২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা বিচ্ছিন্নভাবে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা চালায়। পাকিস্তানি হানাদাররাও এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে প্রতিহত করতে থাকে। তখন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মারাত্মক আহত হন। ৯ এপ্রিল ভোরে পাকিস্তানি মিলিটারি শহরে ঢুকে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইসমাইল হোসেন ভলান্টিয়ার (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে। একই সঙ্গে তারা শহরের হাসান আলী হাইস্কুলের মোড়ে আপাক ও মাখন নামে দুই যুবককে সাইকেল চালাতে দেখে গুলি করে হত্যা করে।চাঁদপুরের আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা বলেন, ‘৮ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর হাত থেকে প্রথম চাঁদপুর স্বাধীন হয়। মিত্রবাহিনী ৬ ডিসেম্বর হাজীগঞ্জ অতিক্রম করে ৭ ডিসেম্বর রাতে আমরা চাঁদপুর মুক্ত করি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে চাঁদপুর পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০১৩ সালে বড় স্টেশনে ‘রক্তধারা’ নামে বধ্যভূমি নির্মাণ করা হয়। এর আগে চাঁদপুরের প্রথম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কালাম, খালেক, সুশীল ও শংকরের নামে ট্রাক রোডে নির্মাণ করা হয় ‘মুক্তিসৌধ’ এবং চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে লেকের ওপর দৃশ্যত ভাসমান মুক্তিস্মৃতি সৌধ ‘অঙ্গীকার’ নির্মাণ করা হয়।তিনি আরও বলেন, ‘চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ জেলায় স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের নামের তালিকা সম্বলিত একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া চাঁদপুর পৌরসভার ৫ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় ‘শপথ চত্বর’।প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সাল থেকে প্রতি বছর ১ ডিসেম্বর সার্বজনীনভাবে চাঁদপুর শহরের হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অঙ্গীকারের পাদদেশে মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মৃতিকে স্মরণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য এই মেলার আয়োজন করা হয়। ২০২৩ সালে স্থান পরিবর্তন করে এই মেলার আয়োজন হয় শহরের আউটার স্টেডিয়ামে। তবে এ বছর এই মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়নি।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মানবতার সেবায় কালিয়াকৈর গ্রুপ

টিভিতে আজকের খেলা