কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) বাসের সংখ্যা কম থাকায় শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। আসনের চেয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী নিয়ে বাসগুলোকে প্রতিদিন চলাচল করতে হচ্ছে। এ কারণে প্রতিদিনই শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে এবং দরজার সামনে ঝুলে যাতায়াত করতে হয়।
কখনো-বা বাসে ঝোলারও জায়গা মেলে না। ওই সময় নিরুপায় হয়ে বেছে নিতে হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশা। সেখানে ভাড়া বেশির পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় শিক্ষার্থীদের। তবে এ নিয়ে প্রশাসনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে ৫৯৩৪ জন। তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ থাকা নিজস্ব বাস ৮ টি এবং ভাড়ায় চালিত বিআরটিসির বাস ৮টি মিলে মোট ১৬টি বাসের সিট সংখ্যা প্রায় ৭৫০টি। মোট শিক্ষার্থী ও বাস সংখ্যার হিসেবমতে, ৩৭১ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১টি বাস এবং ৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি সিট বরাদ্দ রয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন শিডিউলে বিআরটিসির ভাড়ায় চালিত লাল বাসগুলোর বেশিরভাগেরই ফিটনেস নেই। প্রায়ই যাত্রার মাঝপথে নষ্ট হয়ে যায় এই বাসগুলো, ফলে শিক্ষার্থীদের ধাক্কাতে হয়। এছাড়া এই বাসগুলোর পাখা নষ্ট, বৃষ্টির দিনে ছাদ দিয়ে পানি পড়ে ইত্যাদি নানান সমস্যায় জর্জরিত এই লাল বাসগুলো।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিকতার চরম সংকটে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে বাধ্য হয়ে থাকতে হয় শহরের মেস কিংবা বাসা বাড়িতে। এদিকে বাস সংকটের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া কিংবা শহরে টিউশন; বাসে জায়গা না পাওয়ায় অনেককেই অটোরিকশা কিংবা সিএনজির উপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে প্রায়শই ভাড়া বেশির পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজিদ হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা একবার বাসে ঝুলে ঝুলে ক্যাম্পাসে আসে আবার ক্লাস শেষ করে বাসে ঝুলে ঝুলে বাসায় যায়। যেখানে একটা বাসে সিট সংখ্যা ৫০/৬০ টি সেখানে যাত্রী উঠে ১০০ জনেরও বেশি। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মাঝপথে গিয়ে বাস নষ্ট হয়ে যাওয়া আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া দৈনন্দিন বিষয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা দেখেও না দেখার ভান করে থাকে, এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসনকে বার বার বলার পরেও সমস্যার কোনো উন্নতি হচ্ছে না এটা খুবই দুঃখের বিষয়।
মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিমা আক্তার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকেই বাসের সংকট দেখতেছি৷ প্রতিদিনই বাসের সিট নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিপাকে পরতে হয়। গাদাগাদি করে বাসে করে যাওয়া-আসা করা লাগে। এই সমস্যা দ্রুত নিরসনে প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।’
একই বর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাসেল মিয়া বলেন, ‘কুবি শিক্ষার্থীদের বাস সংকট যেন এখন সকল ভোগান্তির কারণ হয়েছে। প্রশাসন তাদের মন মতো সব করছে, অথচ শিক্ষার্থীদের সমস্যা তারা কর্ণপাত করছে না। বাসে আসা-যাওয়ার সময় দাঁড়ানোর জায়গাটা পর্যন্ত থাকে না। বারংবার বাস সংকট সম্পর্কে প্রশাসন ও ভিসি স্যার বরাবর জানানোর পরও তারা বিষয়টা অবহেলা করছে। অতিদ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে কাজ না করতে পারলে, শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ না করতে পারলে এই প্রশাসন ব্যর্থ বলে গণ্য করা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শেখ মকছেদুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের চিন্তা আছে। যেহেতু শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক বেশি আর বাস সংখ্যা অনেক কম, এটা একটা দুশ্চিন্তার বিষয়। এই বিষয়টা আমরা প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করব। যদি সম্ভব হয়, বাজেটে বরাদ্দ থাকে, তাহলে নতুন গাড়ি কেনা হবে। বাসের ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে আমরা সুপারিশ করব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘আমরা পর্যায়ক্রমে লাল বাসের সংখ্যা বাড়াতে চাচ্ছি। সরকারের নির্দেশনাও রয়েছে নিজস্ব বাসের পরিবর্তে ভাড়ায় বাসের সংখ্যা বাড়ানোর সংখ্যা। আমরা নীল বাস (নিজস্ব বাস) বাড়ানোর চেয়ে ভালো লাল বাসের ব্যবস্থা করতে পারি। এছাড়া নীল বাসের চেয়ে লাল বাসের প্রতি সরকার থেকে বরাদ্দও বেশি।