সারি সারি গাছ। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে মিশরের হলুদ রঙের মাল্টা।সকাল থেকেই সারিবদ্ধভাবে দর্শনার্থীরা বাগানে প্রবেশ করছেন এবং ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কেউ কেউ নিজ হাতে গাছ থেকে মাল্টা ছিঁড়ে খাচ্ছেন,আবার কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।অনেকে ফেসবুকে লাইভ করছেন।কেউ কেউ হলুদ রঙের মাল্টার স্বাদ পরীক্ষা করে নিজের হাতে ছিঁড়ে নগদ টাকায় কিনে নিচ্ছেন।সদিচ্ছা আর চেষ্টা থাকলে যে কোনও স্বপ্নই এক সময় ধরা দেয়। এমনই এক সফলতার গল্প তৈরি করেছেন কৃষি উদ্যোক্তা মতিউর রহমান।বাংলার মাটিতে মিশরীয় জাতের সুমিষ্ট রসালো হলুদ মাল্টা আর স্বপ্ন নয়,এখন বাস্তব।স্বাদে ও রূপে সেরা।মতিউর রহমান পেশায় একজন চাকুরীজাবী।স্বপ্ন ছুতে ৭বিঘা জমিতে গড়েছেন হলুদ রঙের মাল্টা বাগান,গাছ থেকে ছিঁড়ে কেনার সুযোগ দিচ্ছেন দর্শনার্থীদের।গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সাতখামাইর ডালে শহর গ্রামে সমতল ভূমিতে মিশরীয় জাতের হলুদ রঙের মাল্টা চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি।চার বছর আগে ৭ বিঘা জমি ১০ বছরের জন্য ভাড়া নিয়ে মাল্টা ও কমলা বাগান গড়ে তোলেন।এই উদ্যোক্তার বাগানে মিশরীয় জাতের হলুদ রঙের মাল্টা চাষে এবারই প্রথম শতভাগ গাছে ফলন এসেছে।হলুদ রঙের মাল্টা আশপাশের মানুষের মধ্যে প্রচুর আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।তার বাগানে দার্জিলিং জাতের কমলা ও হলুদ রঙের মিশরীয় জাতের মাল্টার রূপ, রস, আর গন্ধ চারদিকে হইচই ফেলে দিয়েছে।প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী ও ক্রেতা বাগানে ভিড় করছেন।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,উপজেলার সাতখামাইর ডালে শহর গ্রামে বিনা টাকায় বাগানভ্রমণ,নিজ হাতে গাছ থেকে ছিঁড়ে কেনার সুযোগ পেয়ে খুশি দর্শনার্থী ও হলুদ রঙের মিশরীয় জাতের মাল্টার ব্যাপক চাহিদা পূরণ করতে পেরে বাগান মালিকের মুখে হাসি ফুটেছে।তারা মাল্টার সঙ্গে নিজেদের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এ কারণেই প্রত্যন্ত পল্লী গ্রামের এই হলুদ রঙের মাল্টা বাগান এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল বাগান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখন প্রতিদিনই ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা আসছেন।সবাই সুমিষ্ট ও সতেজ রাসায়নিকমুক্ত মাল্টা পেয়ে খুশি। জানা গেছে, ২০২১ সালে ১০ বছরের চুক্তিতে প্রায় সাত বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে বাগানটি তৈরি করেন কৃষি উদ্যোক্তা মতিউর রহমান।মতিউর রহমান স্থানীয় বাসিন্দা না হয়েও মিশরীয় হলুদ রঙের মাল্টা চাষে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।তিনি টাঙ্গাইলের মিজাপুর উপজেলার বাসিন্দা এবং শ্রীপুরে একটি কারখানায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কর্মরত রয়েছেন।চাকরির পাশাপাশি জমি ভাড়া নিয়ে মাল্টা বাগান গড়ে তোলেন।চার বছর আগে ঝিনাইদহ থেকে ৫শ মিশরীয় জাতের হলুদ রঙের মাল্টার চারা রোপণ করেন।বর্তমানে তার বাগানে পাঁচজন শ্রমিক বাগান দেখবালের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।চার বছর আগে সারিবদ্ধভাবে বাগানে মাল্টা লাগাছ রোপণ করা হয়। গাছগুলোর উচ্চতা ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত।এবার গাছগুলোতে দ্বিতীয়বারের মতো ফল এসেছে। প্রথমবার ফলন কম হলেও এবার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বাগানে প্রবেশ করতেই গাছের ডালে ঝুলে থাকা সুমিষ্ট ও রসালো হলুদ রঙের মাল্টা।যা প্রথম পলকেই নজর কাড়বে দর্শনার্থীদের।প্রতিটি থোকায় ১০ থেকে ১২টি করে বড় বড় মাল্টা ঝুলছে।দেখা গেছে, সারিবদ্ধভাবে দর্শনার্থীরা বাগানে প্রবেশ করছেন এবং ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কেউ কেউ নিজ হাতে গাছ থেকে মাল্টা ছিঁড়ে খাচ্ছেন, আবার কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত। অনেকে ফেসবুকে লাইভ করছেন। কেউ কেউ মাল্টার স্বাদ পরীক্ষা করে নিজের হাতে ছিঁড়ে নগদ টাকায় কিনে নিচ্ছেন।নিজেদের পছন্দমতো হলুদ মাল্টা সংগ্রহ করতে পেরে সবাই আনন্দিত। আর এটাই বাগানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। নিজে হাতে মাল্টা গাছ থেকে ছিঁড়ে কিনতে পারার সুযোগই এই বাগানের প্রচারের মূল ভিত্তি।এখানে প্রতি কেজি মাল্টার দাম ২৫০ টাকা। মাল্টা না কিনলেও যে কেউ বিনা টাকায় বাগান ঘুরে দেখতে পারেন। গাছ থেকে মাল্টা ছিঁড়ে স্বাদ নেয়ার সুযোগও থাকছে।বাগানের পরিচর্যাকারী জাহাঙ্গীর আলম জানান,চার বছর আগে ঝিনাইদহের একটি নার্সারি থেকে সব মিলিয়ে ৫০০টি মাল্টার চারা সংগ্রহ করে রোপণ করা হয়। মাল্টা ছাড়াও দার্জিলিং জাতের ১০০টি কমলার চারা রোপণ করা হয়।বর্তমানে দাজিলিং জাতের কমলা শেষ হয়ে গেছে।এ বাগান থেকে গত বছর প্রায় ৭০ শতাংশ ফলন পাওয়া যায়। গেল বছর বিক্রির পরেও আমাদের খরচই ওঠেনি। এ বছরই প্রথম প্রতিটি গাছেই প্রচুর পরিমাণে মাল্টা ধরেছে।মিশরীয় জাতের প্রতিটি মাল্টা গাছে কমপক্ষে ৩০ কেজি পরিমাণ মাল্টা এসেছে।এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করা হয়েছে।আরও ২০ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রির আশা করছেন বাগান কতৃপক্ষ।উদ্যোক্তা মতিউর রহমান বলেন,চাকরির সুবাদে শ্রীপুরে আসা হয়।পরে কৃষির প্রতি ঝোঁক থেকে তার উদ্যোগটি নেওয়া।প্রথমে শখের বশে কমলা ও মাল্টা চাষ করেছিলেন।তিনি আরো বলেন,আমাদের বাগানে প্রধান ফল কমলা এবং মাল্টা।২০২১ সালে ঝিনাইদহে মাল্টা উৎপাদন দেখেছি এবং তা থেকেই মাল্টা চাষে উদ্যোগী হই।’বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেফিরে দেখি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার লাল মাটিতেও মাল্টা ও কমলা উৎপাদন সম্ভব। আমার চেষ্টা সফল হয়েছে। এখানে রোপণের পর উৎপাদনের প্রথম বছরেই দু-তিনটা মাল্টা এক কেজি পরিমাণ ওজন হয়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় এবার ভালো উৎপাদন হয়েছে।তিনি আরো বলেন,গাছে ফুল আসা থেকে শুরু করে হার্ভেস্ট করা পর্যন্ত কোনো মেডিসিন প্রয়োগ করতে হয় না। ফুল আসার আগে গাছের সুস্থতার জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়।দেশের মাটিতে যে মাল্টা হয়ে থাকে, সেগুলো সুমিষ্ট এবং রসালো হয়। আশা করছি, কোনো একসময় দেশের বাইরে থেকে মাল্টা আমদানি করতে হবে না। নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন,গাজীপুরের ফাঁকা লাল মাটির জমি ফেলে না রেখে কৃষি অফিসের সহায়তায় মাল্টা উৎপাদন সম্ভব।শ্রীপুরের মাওনা থেকে এসেছেন আকরাম। তিনি বলেন,বাগান ঘুরে দেখে নিজ হাতে পছন্দ মতো মাল্টা সংগ্রহ করছি। প্রতি কেজি মাল্টার মূল্য ২৫০ টাকা। ‘নিজের হাতে টাটকা ও সুস্বাদু মাল্টা কিনতে পেরে ভালো লাগছে।মাল্টা দেখতে ও মাল্টা ক্রয় করতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছেন সাব্বির হোসেন। তিনি বলেন,ফেসবুকে দেখে গাছে থাকা মাল্টা দেখার শখ হয়েছে।উৎফুল্ল হয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে এসে সবার মন খুশিতে ভরে গেছে।বাগান ঘুরে দেখে বিমোহিত হয়েছি। নিজ চোখে না দেখলে অনুভূতি বোঝানো যাবে না।শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন,ব্যক্তি-উদ্যোগে মিশরীয় জাতের হলুদ রঙের মাল্টা চাষে সফল উদ্যোক্ত মতিউর রহমান।মিশরীয় জাতের মাল্টার মান খুবই ভালো।আমাদের এ আবহাওয়া মাল্টা চাষের উপযোগী হওয়ায় আকার ও রং চমৎকার হয়েছে।তার এমন সাফল্য অনন্য কৃষকদের মাল্টা চাষে আগ্রহী করবে।শ্রীপুর উপজেলা মাল্টা চাষে একটা উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় জায়গা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমদানি-নির্ভরতা কমানোর জন্য অনেক চাষিকে আমরা কমলা ও মাল্টা চাষে উৎসাহিত করছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে চাষিদের চারা সরবরাহ করছি। কৃষি বিভাগের পক্ষে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
গাছে গাছে ঝুলছে মিশরের হলুদ মাল্টা,বাগানে দর্শনার্থীদের ভীড়
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 Comments
আরো দেখুন