বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
No menu items!
বাড়িকৃষি ও প্রকৃতিদাম কম পাওয়ায় আর্থিক সংকটে পানচাষিরা 

দাম কম পাওয়ায় আর্থিক সংকটে পানচাষিরা 

২০ বছর আগেও খাসিয়া পানের কুড়ি বিক্রি হয়েছে হাজার টাকায়।এবার (২০২৪) এক কুড়ি পান (২০ কান্তা বা দুই হাজার ৮৮০টি পান বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায়।দাম কম পাওয়ায় অর্থকষ্টে পড়েছেন খাসিয়া (খাসি) পানচাষিরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রায় অর্ধেক দামে পান বিক্রি করতে হয়েছে তাঁদের। অনেক বছর ধরে ভরা মৌসুমেও পানের মূল্য এতটা কম হয়নি। এতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে হিমশিম খেতে হচ্ছে খাসিয়া পানচাষিদের।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ-সহ পাহাড়ি দূর্গম এলাকার গভীরে বিভিন্ন খাসিয়া পুঞ্জির অবস্থান। এসব পুঞ্জিতে বসবাসকারী খাসিয়াদের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে খাসিয়া পানের চাষ। পান চাষের আয় দিয়েই চলে তাঁদের জীবন-জীবিকা।এ বছর পানের দাম কম হওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে খাসিয়াদের জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পান চাষের আয় দিয়ে চলে খাসিয়াদের জীবন-জীবিকা।এ বছর পানের দাম কম হওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে তাঁদের জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। একদিকে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে উৎপাদিত পানের ন্যায্য দাম নেই। এ রকম পরিস্থিতিতে কঠিন সময় পার করছেন খাসিয়া (খাসি) সম্প্রদায়ের লোকজন। অর্থ সংকটে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন দাদনসহ নানা রকম ঋণের জালে।বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে ছোট-বড় ৭৩টি খাসিয়া পুঞ্জি এবং পান চাষের ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের প্রচার সম্পাদক সাজু মারছিয়াং বলেন চলতি বছর মৌসুমের শুরুতেই শিলা বৃষ্টিতে খাসিয়া পানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে জুন থেকে প্রায় অক্টোবর মাস পর্যন্ত কম দামে পান বিক্রি হয়েছে। এখন নভেম্বর থেকে পানের দাম কিছুটা বাড়ছে। তাও অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম। এখন শীত চলে আসছে। পানের মৌসুম শেষ। অনেকের জুমে পান কমে গেছে। এতে খাসিয়া পুঞ্জির অনেককে কষ্ট করে চলতে হচ্ছে।বৃহত্তর সিলেটের খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল,পান পুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) ও পানচাষি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কয়েক দফা কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন পানপুঞ্জির পানজুমের (পানবাগান) ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।পুঞ্জির লোকজন পরিচর্যার মাধ্যমে সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠেছেন। পান উৎপাদনও ভালো হয়েছে। কিন্তু পান উৎপাদনের ভরা মৌসুম এবং চলতি সময়ে পানের যে দাম পাওয়ার কথা, চাষিরা সেই দাম পাননি। এ বছর বাংলা পান উৎপাদনও ব্যাহত হয়েছে। সে বিবেচনায় খাসিয়া পানের ভালো মূল্য পাওয়ার কথা। উল্টো দাম কমেছে।পান চাষিরা জানান, জুলাই থেকে আগস্ট মাসে পানের উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে। এ পরিস্থিতিতে একদিকে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে পানের দাম কমে যাওয়ায় পুঞ্জির পানচাষিরা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। অনেক পানচাষি দাদনসহ বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) ঋণে জড়িয়ে পড়ছেন। সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। খাসি (খাসিয়া) লোকজন নিজেদের অর্থ দিয়েই বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে অভ্যস্ত। কিন্তু এবার অনুষ্ঠান বা উৎসবের জন্য পুঞ্জির কারও কাছে টাকা চাওয়ার পরিবেশ নেই।কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া পুঞ্জির নারী পানচাষী শিলা পতমী জানিয়েছেন, তাঁদের ৬ জনের পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে খাসিয়া পানের চাষ। প্রায় দুই একর জায়গায় পানের চাষ করেন তিনি। প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ কুড়ি পান বিক্রি করেন। তবে অন্য সময়ের চেয়ে এ বছর পানের দর প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। ফলে পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে। ঋণের জন্য তাঁকে একটি বেসরকারি সংস্থার দ্বারস্থ হতে হয়েছে।১নং নাহার খাসিয়া পুঞ্জির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পানচাষী জানিয়েছেন, বর্ষার শুরুতে পানজুমের পরিচর্যার জন্য নিরুপায় হয়ে স্থানীয় এক পাইকারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এখন অন্যরা যে দামে পান বিক্রি করছেন, তাঁকে পাইকারের কাছে সেই দামের চেয়েও দুই থেকে তিন শ টাকা কমে পান বিক্রি করতে হচ্ছে। এ ছাড়া অনেকেই আছেন, এনজিওর সাপ্তাহিক কিস্তি ও শ্রমিকের বেতন দিয়ে হাতে আর কিছুই থাকছে না।পানচাষিরা জানিয়েছেন, পান গাছ রোপণ শেষে তিন বছর পরিচর্যার পর গাছ থেকে পান তোলা শুরু হয়। রোগবালাইয়ে আক্রান্ত না হলে একটি পানগাছ ৫০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। সাধারণত এপ্রিল মাসে গাছে নতুন পান আসতে শুরু করে। মে মাস থেকে পাতা পরিপক্ব হতে থাকে। জুন মাসে পানের চারা কাটার মৌসুম শুরু হয়। এ সময় পানের উৎপাদন বেশি থাকে। এই অবস্থা চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ডিসেম্বর থেকে পানের সরবরাহ কমে যায়।খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ও লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মান্ত্রী, ফিলা পতমী বলেন, রোগবালাই, শিলাবৃষ্টির ধকল কাটিয়ে উঠে পান ভালোই উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু ন্যায্য মূল্য মিলছে না। সিন্ডিকেটের কারণে এই দাম কম কি না, বুঝতে পারছি না। জিনিসপত্রের মূল্য বাড়ছে, পানের দাম কমছে। খাসিয়াদের অবস্থা খুব খারাপ। খাসিয়াদের মূল আয়ই পান থেকে। অনেকে ঋণে জড়িয়ে পড়ছে। নিজেই খেতে পারছে না, যে কারণে সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতেও কেউ সাড়া দিতে পারছে না।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
আরো দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মানবতার সেবায় কালিয়াকৈর গ্রুপ

টিভিতে আজকের খেলা